মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারত কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে?

Written by Madhobi Sen

Updated on:

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারত কেন গুরুত্বপূর্ণ: ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুতর সংকটগুলির মধ্যে একটি। ইরান-ইজরায়েল (Iran Israel conflict) যুদ্ধের জেরে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা তীব্রতর হয়েছে। প্রতিদিন মিশাইল লঞ্চের কারণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বহু শহর। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায়, এই সংকট সমাধানের জন্য অনেকেই মধ্যস্থতা করতে চাচ্ছে, বিশেষ করে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারত কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে

ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ এলাহি সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তাঁর মতে, ইজরায়েলকে বোঝানোর ক্ষমতা ভারতের আছে, এবং সেই শক্তি ব্যবহার করে ভারতকে অবশ্যই ইজরায়েলকে আগ্রাসন কমাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ইরান মনে করে, ভারতের ভূমিকা এই সংঘাত কমাতে এবং মধ্যপ্রাচ্যয় স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

WhatsApp Group Join Now

ইরাজ এলাহি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত, ভারতকেই ইজরায়েলকে বোঝাতে হবে।” এমনকি, ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন এই বিষয়ে।

ভারত বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। এ বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক থেকেও একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ করছি।” বিদেশ মন্ত্রক আরও জানিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যর নিরাপত্তা সংকট সমাধানের জন্য সকল পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনাই একমাত্র পথ।

WhatsApp Group Join Now

ভারত মনে করে, এই সংঘাত যেন বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সকলকে সংযমের পথ অনুসরণ করতে হবে।

ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতের সূচনা নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক বিরোধ বহু বছরের। বিশেষ করে গত বছর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর এই সংঘাত আরও বেড়ে যায়। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েল গাজা এবং লেবাননের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালায়, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

WhatsApp Group Join Now

ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর থেকে ইরানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট রুহানি এবং হাসান নাসরাল্লাহের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যর রাজনৈতিক মানচিত্রকে আরও জটিল করে তুলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের সংঘাত নতুন করে নানা চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। মিশাইল হামলা, বিমান হামলা, এবং সামরিক সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং অগণিত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যর সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

WhatsApp Group Join Now

এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থাও সংকটাপন্ন। যুদ্ধের কারণে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, যার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়ছে। তেলের দামের উর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলির পর্যটন, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ এবং এটি ইরান ও ইজরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সমাধানের জন্য ভারতের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। ভারতকে অনেকেই নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখে, বিশেষ করে এই অঞ্চলের শান্তি স্থাপনে।

WhatsApp Group Join Now

ভারত ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারত চায় যে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি যেন আরও বড় আকার ধারণ না করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই সংঘাতের নিষ্পত্তি হয়। তবে, ভারতের পক্ষে এককভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে না। এই অঞ্চলে অন্যান্য বড় শক্তির হস্তক্ষেপও প্রয়োজন হতে পারে।

কেন ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি?

ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ভারতও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল আমদানি করে ভারত, যা যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে।

WhatsApp Group Join Now

ইরান ও ইজরায়েল উভয়েই ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইরানের সঙ্গে ভারতের তেল বাণিজ্য এবং ইজরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, দুটিই ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারতের পক্ষে উভয় দেশের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ইরান ও ইজরায়েলের এই সংঘাত কতদিন চলবে এবং কিভাবে এটি শেষ হবে তা বলা মুশকিল। দুই পক্ষই শক্ত অবস্থানে রয়েছে, এবং আপাতত কোনও পক্ষই ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। তবে, মধ্যপ্রাচ্যয় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের মতো দেশের কূটনৈতিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

WhatsApp Group Join Now

বর্তমানে, ইরান ভারতের মাধ্যমে ইজরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। যদিও ইজরায়েল ভারতের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করছে, ইরানও চায় যে ভারত তাদের পাশে থাকুক।

ইরান-ইজরায়েল সংঘাত কেবল দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ নয়, এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলছে। ভারতের মতো নিরপেক্ষ শক্তি এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এর জন্য উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শন করতে হবে এবং আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এই সংঘাতের সমাপ্তি কেবল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই জরুরি।

WhatsApp Group Join Now

Avatar of Madhobi Sen
Madhobi Sen

নমস্কার! আমি Madhobi Sen, এবং গত ৪ বছর ধরে বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখছি। বিশেষ করে আজকের রেট, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, আজকের খবর, বিনিয়োগ ও সঞ্চয়, মিউচুয়াল ফান্ড, রোজগার ও আয়, এবং শেয়ার বাজার নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করি এবং সহজ ভাষায় পাঠকের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার লক্ষ্য হলো পাঠকদের সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা, যাতে তারা বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়ের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠতে পারে।